আনন্দম

ফর্দ ধরে ধরে জিনিস মিলিয়ে নিচ্ছিলেন সুনয়না দেবী। রান্নাবান্নার সময় সঠিক সরঞ্জাম না পেলে বিরক্ত লাগে ওনার। কর্তা, ছেলে-মেয়ে, বৌমারা সবাই বলে পিটপিটানি, কিন্তু কী আর করা, আজন্মকালের অভ্যেস আর যায় কখনো!
নন্দন রোডের মিত্রবাড়িতে আজ বড় আনন্দের দিন।  বহুদিন প্রবাসে নিজের ছেলের কাছে কাটিয়ে আজ বাড়ি ফিরেছেন বাড়ির সকলের প্রিয়, সুনয়নার সেজো বৌমা, করবী মিত্র। 
ভিতরের ঘরে বড়,ছোট জা, দুই ননদের সাথে গল্পে বসেছেন করবী।
-" সত্যি বৌদি, আমাদের কথা তো ভুলেই ছিলে।"
"কী বললে বিশ্বাস করবে, তোমাদের কথা একটা পলের জন্যও ভুলিনি। তাড়াহুড়ো করে এলাম তো সেই জন্যই"
"এই নাকি তাড়াহুড়োর নমুনা। আসবে আসবে করে কতবার আটকে গেলে বলতো"
"মায়ের চেহারা একদম এক আছে দেখছি। কী ভালো যে লাগছে, কী বলবো"
"শান্তি, বৌমা, শান্তি, বুঝলে কিনা। মনে শান্তি থাকলে আর কী চাই" রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে হেসে বলে গেলেন সুনয়না।
"থাক অনেক হয়েছে", ননদ চিত্রাকে একটু ধমকের সুরে বললেন করবীর বড় জা সুতপা, "ওকে ছাড় তোরা এখন, ঠাকুরপো তিনবার অকারণে এখান দিয়ে ঘুরে গেল, তোদের কোনো আক্কেল নেই নাকি রে? এর পরে আরো কতজন আসবে দেখা করতে। ওকে তো নিজের বাবা-মায়ের সাথে দেখা করতে যেতে হবে। তুই যা সেজো, একটু জিরিয়ে নে গে যা"
"বোয়ালের কালিয়া খাইনি  প্রায় এক যুগ হলো। আজ পাকা মাছ দেখে এনেছি।জমিয়ে রেঁধো তো করবী।" বলতে বলতে ঘরে ঢুকলেন করবীর ছোটো ভাশুর।
"সেজোমা, আমসত্ত্বের চাটনি আমার জন্য" হাত ধরে ঝুলে পড়লো ছোটো দেওরের মেয়ে মুন্নি। চোখের কোণের আনন্দের দু-ফোঁটা মুক্তো আঁচলে রেখে নিজের ঘরের দিকে গেলেন করবী।
" কেমন আছো? সবার এত আনন্দ আমি  আসাতে?! ভাবতেই পারছি না যে"
"মা তো দশদিন আগে থেকে তোমাকে ওয়েলকাম করার জোগাড়যন্ত্র শুরু করেছেন"
"আর তুমি?"
"আমার কথা বুঝি আবার আলাদা করে বলতে হবে। আমি তো ভাবছিলাম, আরে, কথার মাঝে উঠে যাওয়ার স্বভাব আর গেলো না। যাচ্ছোটা কোথায়?"
" তাতাইটা অনেকক্ষণ ধরে ডাকছিলো মনে হল যেন"
-------------
" মধুবাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ
মাধ্বীর্নঃ সন্তোষধীঃ।
মধু নক্তম্‌ উতোষসো মধুমৎ পার্থিবং রজঃ
মধুমান্নো বনস্পতির্মধুমাং অস্তু সূর্যঃ।"

মাতৃশ্রাদ্ধের অন্তিমপর্বে সমস্ত পৃথিবীর কল্যাণ কামনা করে বাষ্পাচ্ছন্ন কন্ঠে মন্ত্রপাঠ শেষ করলো, মনসিজ ওরফে তাতাই, সদ্য অমৃতলোকগতা শ্রীমতি করবী মিত্রের একমাত্র পুত্র।

Comments

Popular posts from this blog

আনকথা #১২

অলিখিত #৪

অলিখিত #৩