এমন আমি ঘর বেঁধেছি




একটা রাস্তা কোথা থেকে আসতে আসতে একটা বাঁক নিয়ে আবার কোথায় যেন হারিয়ে গেছে...সেই বাঁকটার পাশে কিছুটা ঘাসে ঢাকা একটু উঁচু জায়গার উপর ছোট্ট একটা বাড়ি..সাদা কাঠের বেড়া আর গেট.. গেট পেরিয়ে নুড়ি বিছানো একটা রাস্তা চলে গেছে বাড়ির দিকে.. তার দুপাশে মরশুমি ফুলের থোকা থোকা হাসি.. ক্যালেন্ডুলা, পপি, জিনিয়া আর গোলাপ..... রাস্তা থেকে উঠেই একটা বারান্দা.. সেখানে একটা বেতের আরামচেয়ার ... উপরে একটা জাপানি লন্ঠন ঝুলছে.. বারান্দার এক কোণে একটা বড় টবে পাতাবাহার..

স্বপ্নের বাড়ি ওই টিলাটার ধারে
কোল ছুঁয়ে যার কিশোরী নদীটি বাঁকে
দেবদারু বন মেখে উঠে গেছে পথ
ব্যালকনি জুড়ে মেঘ রোজ ছবি আঁকে

বারান্দা দিয়েই ঢুকেই একটা মোটামুটি বড় ঘর.. তার দেওয়ালের রঙ হালকা বাদামি.. মেঝেতে একটা বাদামি-মেরুন গালচে পাতা .. একটা ছোট্ট তেপায়া টেবিল মাঝখানে.. তার উপরে কাঁচের বাটিতে বাগানের ফুল আর কিছু পাইনপাতা রাখা আছে.. ঘরের কোণে একটা লম্বা ল্যাম্প স্ট্যান্ড.. তার শেডএ নানান রঙের কাঁচ.. একদিকের একটা বড় বইএর আলমারি .. তার ভিতরে ভর্তি মোটা মোটা বই.. শক্ত  বাঁধাই.. কিন্তু আলমারিটা বন্ধ.. এদিকে ওদিকে কিছু চেয়ার আর দেওয়ালে ছবির ফ্রেমে পাইনবন চিরে একটা রাস্তা চলে গেছে ...

ভিতরের ঘরের দেওয়ালের রঙ আকাশনীল.. সে ঘরে একটা বিছানা .. এলোমেলো বালিশ ছড়ানো তার উপর.. একটা হালকা চাদর ..সেটাও অগোছালো... একদিকের দেওয়ালে কাঠের পাল্লা দেওয়া একটা আলমারি.. তার হাতলে একটা চামড়ার কভার.. তাতে একটা বাচ্ছা মেয়ের ছবি, মেয়েটার সাথে একগোছা গোলাপি গ্ল্যাডিওলাস... আলমারির একপাশে একটা আয়না.. তার গায়ে ফুল ফুল নক্সা..  দেওয়ালে একটা তিনকোণা ফ্রেমে পাঁচটা সূর্যমুখী... আর বিছানার পাশে বিশাল বড় একটা কাঁচের জালনা.. সেখানে দাঁড়ালে নীল, নীল আর নীল... আকাশটা যেন চলে এসেছে খুব কাছে... হাত বাড়ালেই মেঘের কাছে আছি... নীচের দিকে তাকালে একটা তিরতিরে নদী আর পাইন বন..

পাথুরিয়া ঢালে অচেনা ফুলের ঝোপ
মেঘছেঁড়া রোদে ঝিলমিলি তুলিটান
নদীটাও জানে তির তির তার চলা
অজান্তে কবে হয়ে গেছে কোন গান

এখানে দাঁড়িয়ে সময় কেটে যায় এক লহমায় ... নিজের সাথে মৃদু আলাপচারিতা আর কি জানি কার কথা ভেবে ভাবনাগুলোকে ভাসিয়ে দেওয়া মেঘেদের সাথে

আনমনা ছলে দু-একটি কথা কার
রুমালে জড়িয়ে সন্তর্পণ ভাঁজে
রেখেছি যদিও , জানা ছিলো ভাল ভাবে
কখনো সেসব লাগবে না কোনো কাজে

চারধারে কোনো শব্দ নেই.. চুপ করে শোনা পাইনবনের সাথে নদীর ফিসফিস কথা... কি প্রয়োজন আর কথা বলে...

জাফরানি রঙ বেলাশেষ রোদ্দুরে
নৈঃশব্দের শব্দতে করি স্নান
এক-দু' পশলা ভাললাগাদের ডাকি
সঙ্গে ওরাও- অনুযোগ , অভিমান

এভাবে সারাটা দিন কাটবে ... বিকেলের দিকে ঘরময় থই থই কনে দেখা রোদ্দুর ছড়িয়ে শেষবেলার সূর্য অস্ত যাবে দূরে টিলাটার ওপারে .... কোথা থেকে আসবে মনকেমন করা বাতাস ... পাইনবনদের ঘুম পাড়িয়ে নদীর জলে গা ধুয়ে জানলায় এসে বসবে ... ঘরে ডানা মেলবে হালকা অন্ধকার  ..

ডায়েরী পাতায় মনখারাপের লফ্জ
দূরে কোন দূরে রাখালিয়া সুরে সাঁঝ
জ্বালবো না আলো , আবছায়াটাই বেশ
পশমিনা করে জড়িয়ে রেখেছি আজ

https://youtu.be/NybW5V2EA8Y

Comments

Popular posts from this blog

আনকথা #১২

অলিখিত #৪

অলিখিত #৩