আন-কথা#৭

"নক্ষত্রের আলোয় শীতল আকাশ ছড়ায়ে ছিল শান্ত হয়ে"... বহুদিন পরে যেন এই শান্ত আকাশ দেখি হেমন্তের নীল নীল সন্ধ্যায়। উৎসবের দিন এবার মুখর নয়, অনেকটাই স্তিমিত। অনেকের কাছেই এই পুজো ছোটবেলার স্মৃতি নিয়ে ফিরে এসেছে। আমার ছোটবেলার পুজোর কোনও বিশেষ স্মৃতি ছিল না কখনই। মফঃস্বলের এক নিভৃত পাড়ায় ঢাকের আওয়াজও খুব একটা কানে আসতো না, পাড়ার মন্ডপ অনেকটাই দূরে ছিল। কলকাতার মতো এত ছাতিম গাছও ছিল না, এই মনখারাপ করা তীব্র গন্ধের সাথে পরিচয় কলকাতাতেই। আমাদের ছিল শিউলি গাছ, প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই শিউলি গাছ থাকতো। অক্টোবরের নীল নীল সন্ধ্যায়, হালকা কুয়াশার সরের সাথে শিউলির গন্ধ মিলে মিশে মন ভালো আর মনখারাপের এক মিশ্র অনুভূতি এনে দিত, অপরিণত মনের কাছে তার কোনও ব্যাখ্যা ছিল না। 
"উৎসবের গান আমি গাহি নাকো", কোনওদিনই নয়। এ নির্জন মনের অসুখ আমার চিরকালীন। আলোর মালায় সাজা শহর, পথে মানুষের ঢল এসব শুরু হতেই আমার সব কিছু থেকে অনেক দূরে চলে যেতে ইচ্ছে করে বরাবর। এরকম শান্ত তারাভরা রাত, পথভুলে এসে পড়া লক্ষ্মীপ্যাঁচার সাদা ডানায় লেগে থাকা রাতের বুকের ভিতরে জেগে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। এবার যত্নের অভাবে আবার ছাদবাগানে স্থলপদ্ম নেই, শিউলি আছে, তবে খুব সামান্য। সন্ধের পরে ক্ষয়াটে জোৎস্না মেখে হেসে উঠছে কামিনীর ঝাঁক, এই অসময়ে। শুনেছি, বেশ কয়েকবার দেখেওছি, বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ পায় কামিনী। কামিনী ফুটলে বৃষ্টি আসে। হয়তো আসবে, হেমন্তের বৃষ্টি জানি না আবার কোন দুর্যোগের দিন এনে দেবে। 
আমি দেখি, বহুদিন পরে টুপটুপ করে হিম পড়ে, নিভু নিভু জোৎস্নায় খুব ভালো করে দেখলে চোখে পড়ে কৃত্তিকা নক্ষত্র। অনেকরাতে জেগে থাকলে দেখি কুয়াশা গলে ঝিকমিক করে জোৎস্না, শিরশিরে বাতাসে কাঁপে রুপোলি নারকেলপাতারা। অকারণেই গা ছমছম করে। মনে হয় এমনই হেমন্তের নির্জনতা মেখে নক্ষত্রবীথিতে মিশে গেছেন জীবনানন্দ, বড় প্রিয় ঋতু তাঁকে চিরকালের মতো আপন করে নিয়েছে। আজ থেকে ঠিক একবছর আগে এমনভাবেই হেমন্তকুয়াশায় হারিয়ে গেছে কোনও প্রিয় ডাক। আমার ঘুম আসেনা, ক্লান্তি আসে দুচোখের পাতা জুড়ে। এই রাত, এই তারা, এই হৈমন্তী জোৎস্নার কাছে আমি ঘুম চাই, নির্ভার, নিশ্চিন্ত ঘুম...রিপ ভ্যান উইঙ্কলের মতো দীর্ঘ কোনও ঘুম...জেগে থাকতে আর আমার ভালো লাগে না....

Comments

Popular posts from this blog

আনকথা #১২

অলিখিত #৪

অলিখিত #৩