আন-কথা #৯
খুব ভোরের দিকে ঘুম ভাঙলে ছাদে আসি যখন, পাতায় পাতায় সামান্য শিশির ছুঁয়ে থাকে, কান্নাশেষের ভেজা আঁখিপল্লবের মতো। আকাশ জুড়ে রঙের তোরজোড় লাগে,"শরতের আলোতে সুন্দর আসে"। আমার স্থলপদ্ম কোনওবারই পুজোর সময় ফুল ফোটায় না, এবারও ব্যতিক্রম হলো না। অল্প কিছু শিউলি, অনেকটা টগর আর মাধবীলতাই এবার ফুটছে নিয়ম করে। আর ফুটেছে নীল কেতকী। মায়ের গাছ, বাড়ির উঠোন থেকে শিকড়শুদ্ধই নিয়ে এসেছিলাম শেষবার। বেশ কিছুদিন ঝিমিয়ে ছিলো। নিয়মিত সামান্য যত্নেই আবার সুস্থ হয়ে উঠলো। দিব্যি সুন্দর ফুলেও ভরে এসেছে। মা দেখলে খুব আনন্দ পেতো, ঝরা ফুল তুলে এনে মায়ের ছবির সামনে দিলাম কিছু।
এ বিপন্ন, বিধ্বস্ত দিনে নিয়মমতোই মা দুর্গা এসেছেন। উজ্জ্বলতার স্রোতে ঝলমল করছে কলকাতা। আমার দূর থেকে দেখতে ভালো লাগে, কাছে যাওয়ার কথা ভাবলে সেই চিরন্তন অনীহা পা আঁকড়ে ধরে যেন।
অফিস ফেরত রাস্তায় মানুষের ঢল , আলোর কারুকাজ দেখি। একই সাথে দেখি লেকের ধারের বড়বড় গাছগুলোতে জমে থাকা আবছায়া। আয়লার স্মৃতি বুকে ধরে একটাও পাতা না থাকা মস্ত কী একটা গাছের ডালে একলা পেঁচার ডানায় জমাট বাঁধা অন্ধকার। আমার চোখে আরাম লাগে যেন। এই উজ্জ্বল আলোতে চোখ মেলতে আমার ভালো লাগে না।
পাড়ার পুজোতে বোধন হয়, ধুনো-ধূপ আর ঢাকের শব্দে পাড়া গমগম করে ওঠে। ফেরার পথে একটু দাঁড়িয়ে দেখি মা দুর্গা আর ছেলেমেয়েদের কপালে -গায়ে গঙ্গামাটি ছোঁয়ানো হচ্ছে। কী আচার, কী ব্যাখ্যা আমার জানা নেই। ঘরের মেয়েটির পথশ্রমের ক্লান্তি উপশমের জন্য সামান্য শীতল রূপটান হিসেবে ভাবতে আমার ভালো লাগলো। আমার বাড়ির আলোআঁধারি পথে রাস্তার ধারের গাছ থেকে ঝরা শিউলি সন্তপর্ণে বাঁচিয়ে চলি। শিউলির ডালে বহুদিন পরে জোনাকি দেখে আমার ভালো লাগে।
আমার আনমনা চিন্তার মাঝে কোনও এক নিভৃত ঠাকুরদালানে একচালার প্রতিমার মুখে ঘামতেল চকচক করে। ডাকের সাজের স্নিগ্ধতায় মিশে যায় আদিগন্ত কাশফুলের স্বপ্নশুভ্রতা। সন্ধ্যাপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হয় মঙ্গলদৃষ্টি..ভালো হয় বিশ্বচরাচরের।
এমন একটা পুজোর ডাক আমি কবে পাবো, সুগত? এই আলো, এই কোলাহল, এই উন্মত্ত আনন্দপ্লাবনের বাইরে একটুকু শান্তিমাখা উৎসবের অংশ হতে ভালো লাগে আমার, তোমার সঙ্গে।
হঠাৎ লেখাটায় পৌঁছে গেলাম। পৌষ ভোরের মত লেখা। অন্তিম লাইনে সুগত।
ReplyDeleteনিজে যখন টুকিটাকি লিখি, প্রায়সই শিউলিফুল উঁকিঝুঁকি মারে। নিতান্ত শহুরে বলেই হয়ত অন্য ফুলের নামও জানিনা। যাইহোক... লেখাটা পড়তে পড়তে মন নিঝুম হয়ে উঠছিল।