আনকথা #১০
এক একটা দিনের গায়ে কেমন করে জানি না মায়া মায়া তাপ জুড়ে যায়। সারা সপ্তাহের ক্লান্তির পরে কিচ্ছুটি না করে বিছানা আঁকড়ে পড়ে থাকার অলীক ভাবনা কাটিয়ে ওঠার পরে দেখি বুদ্ধজুঁইয়ে ফুল এসেছে ঝেঁপে। ঝুমকোলতায় অনেক কুঁড়ি, লিলিদের ঘুম যথারীতি ভাঙেনি। ফুরুশ গাছগুলো খুব লক্ষ্মী, ঠিক সময় মতো ফুল ফুটিয়ে দেয়। সকালবেলার এই একান্ত একটুকরো সময় নিজের মতো করে বেশ কাটে। আমার প্রভাত, আমার সন্ধ্যা হৃদয়পত্রপুটে গোপন থেকে ফুটে ফুটে আমাকেই এই যে একটুকরো ভরে থাকার ভালোবাসা দেয়, তাই নিয়ে এটাসেটা করে যাই। সবাইকে আরামের স্নান করিয়ে, ঝুমকোলতার জন্য ছোট্ট মাচা বানিয়ে, ঝরাপাতা-শুকনোফুল সরিয়ে যখন পুরোটার দিকে তাকাই, খুব খুব খুব শান্তি লাগে।
ঘড়ির দিকে ইচ্ছা করে তাকাই না। গুছিয়ে তরি-তরকারি কেটে সামান্য রান্নাই যত্ন করে করতে ইচ্ছে হয়। বইয়ের আলমারি বহুদিন গোছানো হয় না, তাকের ধুলো মুছে নতুন খবরের কাগজ পাতি। চোখে পড়ে সেই থমকে যাওয়া সময়ের আখ্যান। হঠাৎ আসা হাওয়ায় খোলা কাগজ উড়ে যায়, পালটে যায় খবর, সময়। এই নিরন্তর বদলে বদলে যাওয়াও জীবনের আরেক নাম।
বৈশাখের রুক্ষতার সাথে অন্য এক মাধুর্যও আছে। তার আকাশের নীলে, তার জারুল-অমলতাস-কৃষ্ণচূড়ার ঔজ্জ্বল্যে, তার আচমকা ঘনিয়ে আসা মেঘের মাঝে সন্ন্যাসীর ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিও মিশে থাকে- আমার চিরকালই এমনটাই লাগে।
রান্না শেষে গন্ধরাজলেবু কেটে ভিজিয়ে রাখি, ঘরে থাকা গাছপালাগুলোর পাতা মুছে দিই অল্প ঠান্ডা জল দিয়ে। বহুদিন পরে চুলে ক্যান্থারাইডিন মাখি, চন্দন সাবান নামিয়ে আনি। আগে থেকে ভরে রাখা ঠান্ডা জলে অনেকদিন পর পরিতৃপ্তি পাই যেন।
রবিবার দুপুরের একফালি ঘুম আমার ইহজগতের পরম চাওয়াগুলোর অন্যতম। জানলার পাশের নিমগাছের ঝিরিঝিরি বাতাস আর একটানা চলতে থাকা কোকিলের ডাক ঝিম ধরায়। আধো ঘুম আধো তন্দ্রায় দিন শেষই হয়ে আসে।
সুগত, তোমাকে যে কথা হয়নি বলা
শেষ হয়ে এসে অনেকটা পথ চলা
ধুলোবালিকণা জীবনের বাঁক জুড়ে
সঞ্চিত কিছু, কিছুটা গিয়েছে উড়ে
যেটুকু আমার, একান্ত নির্জন-
নিভৃত মনের সাধ করে পাওয়া ধন
খোলা মুঠি ভরে দিলাম তোমাকে, হাতও,
এ তোমারই শুধু, জেনো, বৈশাখজাত।
Comments
Post a Comment